ছেলেটির কেউ নেই। Cheletir Keu Nei, bangla sad story written by Sourav Bhuniya
ছেলেটির কেউ নেই,
কেউ ছিল না কোনো দিনও।
জন্মের আগেই মাকে শুনতে হল,
এ তো অবৈধ,
একে কি করে ঘরে রাখা যায়।
তবু সেই দুঃখিনী বহু কস্টে জন্ম দিলেন।
জন্ম হতেই সংসার হতে একাকী হতে হল।
একদিকে পুরো পরিবার,
আর এক দিকে, স্বামী স্ত্রী আর ওই দুধের শিশু।
যত দিন হল,
শিশুটি বড় হল,
বড় হল সমাজের ঝামটা মুখে নিয়ে।
শুনতে পেল মায়ের নামে কটূক্তি।
কখনও সে শুনেছে বাবা মায়ের কথা কাটাকাটি।
কখনও নিজেকে দোষী পেয়েছে,
ভেবেছে এ ঘর ছেড়ে চলে যায়।
তবু আটকে গেছে,
ওই দুঃখিনী মায়ের অশ্রু ভরা চোখের টানে।
দিন বেড়েছে,
ছেলেটি বড় হয়েছে।
কখনো বা হেরেছে, কখনো জিতেছে।
তবু কখনো হার মানতে শিখেনি।
সে স্বপ্ন দেখেছে বড় হবার,
তার মাকে রাজ রানী করে রাখার।
সে তাই পড়তে চাইত,
বড় হতে চাইত।
কিন্তু হঠাৎ করে কি যেন কি হয়ে গেল!!!
ছেলেটির বাবা হঠাৎ করে দেউলিয়া হয়ে গেল,
সংসারের সব বোঝা যেন হঠাৎ করে ছেলেটির কাঁধে এসে পড়ল।
হঠাৎ করে মায়ের আঁচলে লুকিয়ে থাকা ছেলেটি,
খুব যেন বড় হয়ে গেল।
নিজের স্বপ্নের পড়া শুনা ছেড়ে কাজের খোঁজে নামল।
অনেক কস্টে সৃষ্টে কাজ পেল ঠিকই, তবে মাইনে টা যেন খুবই কম।
নিজের খরচ, সংসারের ভার - সব কিছুতে কেমন যেন হাপিয়ে উঠছিল সে।
তবুও সে স্বপ্ন দেখতো,
স্বপ্ন দেখতো প্রতিদিন - বড় হবার, মাকে রাজ রানী করে রাখার।
কিন্তু হায় রে কপাল!
স্বপ্ন সবার কি সত্যি হয়?
সে প্রেমে পড়ল একজনের,
তাকে নিজের স্বপ্নে রানী করে রাখতে চেয়েছিল সে,
তার বুকে মাথা রেখে এ ভার একটু কমাতে চেয়েছিল,
চেয়েছিল এ ব্যস্ত, নিষ্ঠুর সংসার থেকে একটু দূরে শান্তিতে কিছুটা জিরিয়ে নেওয়ার।
সে তো আর জানত না ----
শান্তি কি অত সহজে আসে?
শান্তি এল কাল নাগিনী রূপে,
তার ভালোবাসা কে ছিনিয়ে নিল
তীব্র অবহেলা, বিদ্রুপ, গেঁয়ো আর সেকেলে আখ্যা দিয়ে।
খুব ভেঙে পড়েছিল সে,
ভেবেছিল এ জীবনের কি মানে!
চেয়েছিল, চির নিদ্রায় যেতে।
কিন্তু ওই যে মধ্যবিত্ত পরিবার,
মাথার ওপর ওই পাহাড় প্রমাণ বোঝা।
অত কি সহজ, তাকে ঝেড়ে ফেলার?
অতই কি সহজ চির নিদ্রায় যাবার???
তাই সে সমস্ত লোনা জল খেয়ে ফেলে,
হৃদয়ের এক কোণে অপমান ভরা দুঃখ গুলোকে চেপে ফেলে
আবার পথ চলা শুরু করল।
এবার তার স্বপ্ন সত্যি হবার পালা।
ঠাকুর একটু মুখ তুলে চেয়েছিল যেই,
অমনি শয়তান এসে হাজির।
ঐতো স্বপ্ন টা সত্যি হতে এক পা কি দু পা দূরে ছিল,
বড় খুশি ছিল সে --
ভগবানের বোধ হয় খুশি সহ্য হয় না।
যার জন্য এত কিছু,
যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা,
হঠাৎ করে সেই মানুষটাই মাঝ পথে তার হাতটা ছেড়ে দিল।
এবার শুরু হল,
লক্ষ্মী ছাড়া এক অভাগা সংসারের কাহিনী।
এক বিধবা বাবা ছেলের কাহিনী।
ছেলেটি কোনোদিনও তার বাবার চোখের দিকে তাকাতে পারেনি।
কখনো বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে পারেনি।
কোন এক আশঙ্কায় কে জানে?
কিন্তু তার মায়ের মৃত্যু যেন
ওদের সম্পর্কের সমীকরন টাকে,
কিছুটা দূরে ঠেলে দিলেও -
কিছুটা হয়তো কাছে এনেছিল।
কিন্তু ওই যে কথায় আছে না,
' অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকায়ে যায়।'
কাছাকাছি আসার আগেই,
দূরত্ব টা চির দূরত্ব রয়ে গেল।
ছেলেটির কোনো দিন ই কেউ ছিল না,
আজও আর কেউ রইল না।
না পরিবার, না পরিজন, না কারোর ভালোবাসা।
সব থেকেও সে যেন অনাথ।
কিন্তু ছেলেটি আজও হারেনি।
সে আজ ও স্বপ্ন দেখে,
সে আজও ভালোবাসে।
সে আজও চেয়ে থাকে ওই আকাশের পানে
যেখানে মিলেছে তারা হয়ে তার প্রিয় আপন জনেরা।
Tag: kobita, bangla kobita, cheletir keu nei, onath, writtrn by sourav, bangla sad story
Post a Comment