নারী যখন নারীর শত্রু – প্রবন্ধ
একবিংশ শতাব্দীতে, বিশেষ করে আজকালকার দিনে আমরা সংবাদপত্র, টেলিভিশন অথবা রেডিও খুললেই প্রায় শুনতে বা দেখতে পাই দৈনন্দিন ঘটে চলা ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং প্রভৃতি ঘটনা। এমনটা মনে হয় এগুলো যেন দৈনন্দিন রুটিনের মত হয়ে গেছে। এসব ঘটনা দেখে সমাজের বৈশ্যমতার কথা উল্লেখযোগ্য ভাবে মনে পড়ে।মনে হয় সমাজে নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো পুরুষ। এই পুরুষ জাতিটার জন্য নারীরা সহজে বাড়ি থেকে বেরোতে দ্বিধাবোধ করে, রাত্রে দেরি করে বাড়ি ফিরতে ভয় করে, এই ভেবে যে বর্বর পুরুষ গুলো হিংস্র জানোয়ার কুকুরের মত সুযোগ পেলেই ছিঁড়ে খাবে। কিন্তু এটা কি সত্যি যে নারীদের একমাত্র সবচেয়ে বড় শত্রু হলো পুরুষ ? না, বাস্তবটা হলো ঠিক এর উল্টো। নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো পুরুষ নয়, বরং নারীরা নিজেরাই। এখানে বিতর্ক উঠতে পারে।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, একজন নারী অপর নারীর কিংবা নারীরা নিজেদের শত্রু কিভাবে হতে পারে? এর উত্তরে উদাহরণ স্বরূপ দেওয়া যেতে পারে –
√ শাশুড়ি বৌমার শত্রুতা,
√ বান্ধবী যখন চোখের বালি,
√ মা ও মেয়ের ইগো,
√ বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া, প্রভৃতি।
এবার প্রত্যেকটির বিস্তৃত ভাবে ব্যাখ্যা করা যাক।
প্রথমে আসি শাশুড়ি-বৌমার কথায়। নারীর সঙ্গে নারীর শত্রুতার মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।বর্তমান পেপার খুললেই কিংবা টিভি চললেই সাধারণভাবে পণের জন্য শাশুড়ি বৌমাকে মেরে ফেলেছে, আবার কখনো এর উল্টোটাও দেখা যায় যে, বৌমা শাশুড়ি কে কুপিয়ে কিংবা ফাঁস লাগিয়ে মেরে দিয়েছে। সামান্য কিছু সাংসারিক কলহ, অশান্তির জন্য নিত্য এসব ঘটনা ঘটতে থাকে।
এবার আসি উল্লেখযোগ্য আর একটি শত্রুতা – বান্ধবীদের মধ্যে শত্রুতা। এখানে এসব শত্রুতা সাধারণত প্রেমঘটিত ব্যাপার থেকে ঘটতে দেখা যায়। অর্থাৎ , ত্রিশঙ্কু প্রেম উদাহরণ স্বরূপ - দুই বান্ধবী একই পুরুষ কে ভালোবাসে, কিন্তু ছেলেটি হয়তো শুধুমাত্র ওদের মধ্যে কোনো একজন কে ভালোবাসে। তাই হয়তো ক্রোধ, ঈর্ষা বশে অপরজন তার নিজের প্রিয় বান্ধবী কে অন্য কারোর হাত দিয়ে কিংবা তার বন্ধুদের ই দিয়ে ধর্ষণ, হত্যা প্রভৃতি ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
আবার কখনও মা ও মেয়ের ইগো সবচেয়ে বড় শত্রুতার মোড় নেয় এবং এক ভয়ংকর আকার ধারণ করে। সম্প্রতি ২০১৫ সালে যে ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে আলোড়ন তুলে দিয়েছিল, এবং যে ঘটনাকে নিয়ে গত ২০১৬ সালে প্রদীপ চ্যাটার্জি র প্রযোজনায় ও অগ্নিদেব চ্যাটার্জি র নির্দেশনায় জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রী রিয়া সেন, মহিমা চৌধুরী, মুমতাজ সরকার, রাজেশ শর্মা, ইন্দ্রাশিস রায়, রিক বসু, কৌশিক সেন ও সুদীপ চ্যাটার্জি প্রমুখ অভিনীত হিন্দি ভাষার চলচিত্র "Dark Chocolate" রিলিজ হয়। এক মা ইন্দ্রানী, এক বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাঁর মেয়ে শিনা বোরা কে নিজের ইগোর বশে চক্রান্ত করে হত্যা করে। এই ছিল সিনেমাটির কাহিনী, সত্যি ঘটনা অবলম্বনে সিনেমাটি হয়েছিল। এইরকম আরো অনেক ঘটনা আছে , মেয়ে এমন কাউকে ভালোবাসে যার সাথে বিয়ে হলে সমাজে পরিবারের প্রতিপত্তি, মান-সম্মান নষ্ট হতে পারে, এই ভেবে মা তার মেয়েকে হত্যা করে। – এরকম ঘটনাও অনেক ক্ষেত্রে ঘটে।
এবার আসছি, বর্তমানকালের সব চাইতে আলোচিত এবং উল্লেখযোগ্য নারী শত্রুতার কোথায়, সেটি হলো পরকীয়া সম্পর্ক। কোনো বিবাহিত পুরুষের স্ত্রী জানতে পারেন যে , তার স্বামী অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন; তিনি তখনই নারীটিকে রাস্তায় লোকালয়ে সবার সামনে উত্তম-মধ্যম দেন কিংবা সবার সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন করে চুলের মুঠি ধরে ঘোরাতে থাকেন। এরকম অসংখ্য ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখা যায়। আবার পরকীয়া সম্পর্কের জেরে কোনো পুরুষ তার বান্ধবীর সহিত ষড়যন্ত্র করে নিজের স্ত্রী, সন্তান -কে নৃশংস ভাবে হত্যা করে, – এরকম অসংখ্য ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।
এছাড়া আরো অনেক ঘটনা আছে , যা দেখে এটা বোঝা যায় যে , নারীরা তাদের নিজেদের কিংবা এক নারী অপর এক নারীর কিভাবে সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে।
এ থেকে অবশেষে এমন একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে, নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু পুরুষ নয়, বরং নারীরাই নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু।
Post a Comment