Header Ads

ছদ্ম নামে পরিচিত বাঙ্গালী। Pen Name of some Bengali writer

ছদ্ম নামে পরিচিত বাঙ্গালী


ছদ্ম নাম 


ইংরেজিতে - 'Pen name'
French - 'nom de plume'
যা প্রকৃত নামের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
একজন লেখক বা লেখিকা তাঁর প্রকৃত নাম (পিতা মাতা প্রদত্ত নাম), লিঙ্গ (অর্থাৎ পুরুষ কিংবা স্ত্রী) ইত্যাদি বিষয়কে সবার কাছ থেকে অর্থাৎ পাথক, সমালোচক ও প্রকাশক দের কাছ থেকে লুকাতে ব্যবহার করেন এই ছদ্ম নাম।

ছদ্ম নাম আসলে কি? 

ছদ্ম নাম মূলত কোন ব্যক্তি বা ক্ষেত্রবিশেষে কোন গোষ্ঠীর স্বগৃহীত ও স্বব্যবহৃত কাল্পনিক নাম। এক কথায় বলতে গেলে, ছদ্ম নাম আসলে নকল নাম।

ছদ্মনাম ব্যবহারের উদ্দেশ্য 

ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল কোন ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখা। শুধুমাত্র কবি কিংবা লেখকরাই নন, অভিনেতা-অভিনেত্রি, গায়ক-গায়িকা, প্রতিবাদী আন্দোলনকারী, অথবা সন্ত্রাসবাদী; এমনকি কম্পিউটার হ্যাকাররাও ব্যবহার করেন ছদ্মনাম।
অভিনেতা -অভিনেত্রীরা ও গায়ক - গায়িকারা যে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, তাকে মঞ্চনাম ও বলা হয়।
কোন কোন ধর্মীয় সঙ্ঘ কিংবা রাজনৈতিক দলও এই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। যেমন - কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃবৃন্দের ব্যবহৃত 'ক্যাডার' নাম এর সবচেয়ে বড় উদাহরন। 

বাংলা সাহিত্যে ছদ্মনাম 

এই ছদ্মনামের প্রথা প্রথম জনপ্রিয় হয় ইউরোপিয়ান সাহিত্যে। ধীরে ধীরে বাংলা সাহিত্যেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এই প্রথা।
যেমন - বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, নাট্যকার , এক কথায় বলতে গেলে বাংলা সাহিত্যের আকাশের রবি কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কৈশোরে 'ভানুসিংহ ঠাকুর' ছদ্মনামে কয়েকটি কবিতা রচনা করেছিলেন।
কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত বাংলা সাহিত্যের আরও অনেক কবি ও লেখক তাঁদের লেখক জীবনের কোন এক সময়ে আবার অনেকে তাঁদের সম্পূর্ণ লেখক জীবনে ছদ্মনামে  তাঁদের লেখা প্রকাশ করেছেন।
অনেক কবি-লেখক আবার ছদ্মনামে এত বিখ্যাত হয়েছেন যে, আসল নামে তাঁদের কেউ চেনেও না।
যেমন - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোন এক সময়ে নীললোহিত নামে লিখলেও এ নামে তিনি প্রতিষ্ঠিত হননি। অন্যদিকে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কিন্তু ছদ্মনাম 'বনফুল' নামেই পরিচিত হয়েছেন।
ঠিক তেমনি 'যাযাবর' কে বিনয় মুখোপাধ্যায় বললে অনেকেই চিনবেন না।

বাংলা সাহিত্যে ছদ্ম নামের প্রয়োজনীয়তা  

বাঙ্গালী এমন এক বিশেষ প্রজাতি যারা সবার থেকে আলাদা। বাঙ্গালী যেমন শৌখিন তাঁদের প্রত্যেকদিনের জীবন-যাপনে তেমনি এরা বিদ্যাভিমানি।
আমরা শুধুমাত্র আমাদের পিতৃপ্রদত্ত নামে যেমন খুশি থাকতে পারি না, তেমনি অন্যকেও খুশি থাকতে দিতে পারি না। তাই আমরা পাড়া - পড়শি, বন্ধু - বান্ধব, শিক্ষক সকল্কে তাঁদের কাজ, আচরন বা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নানান নাম দিয়ে থাকি। তবে সেই নামকরনের মধ্যে থাকে গভীর তাৎপর্য, মজা, কৌতুক এবং কাব্য।
কয়েকটা উদাহরন দিলে আমার কথাগুলো খুব ভাল করে বুঝানো যাবে। অন্নদাশঙ্করের নাম দেওয়া হয়েছিল 'খোকা হাকিম'। দিলিপ কুমার রায়কে 'পাগলা জগাই' আর গুরুসদয় দত্তকে বলা হত 'রায়বেঁশে দত্ত'।
আমারই অর্থাৎ লেখকের ছোটবেলায় মাধ্যমিক ইস্কুলে পড়াকালীন এক ইতিহাসের শিক্ষক আমাদের খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। উনি যেমন শৌখিন ছিলেন তেমনি পরাতেন ও খুব সুন্দর। তবা এক্টু রাগী ছিলেন। তাঁর মুখমণ্ডলের গাল ভরতি দাঁড়ি এমন ছিল যে দেখে লাগত যেন কোন সুলতান কিংবা নবাব। তাই আমারা ছাত্ররা সবাই মিলে উনাকে নাম দিয়েছিলাম 'আলাউদ্দিন খিলজি'। যদিও এই নামটি আমরা উনার পেছনে মজা করে ব্যবহার করতাম কারন সেই বয়সে সামনাসামনি স্যার কে ওই নামে ডাকার সাহস কোনদিনও হয়নি আমাদের। আবার আমাদের এক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের রসায়নের শিক্ষককে  আমরা নাম দিয়েছিলাম 'কেতক পাখির ডিম'।
মূলকথা, আমরা আমাদের আনন্দের জন্য এইসব ছদ্মনাম প্রয়োজন বিশেষে দিয়ে থাকি। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বা কখনও কখনও দলগত ভাবে কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছদ্মনাম নিয়ে থাকেন।
কিছু উদাহরন দিলে জিনিসটা খুব ভালো করে বুঝানো যাবে।
কোনো এক কবির কবিতা সম্পাদক বারবার ফেরত পাঠাচ্ছেন। বন্ধু পরামর্শ দিল কোনো মেয়ের নাম নিয়ে পাঠাতে। বন্ধুর কথায় কবি সেই ফেরত পাঠানো কবিতা 'নীহারিকা দেবি' নাম দিয়ে আবার পাঠালেন। আশ্চর্যরকম ভাবে যে কবির কবিতা সম্পাদকের কাব্যগ্রন্থের ঝুলিতে ঠাই পাচ্ছিল না, সেই কবিতাই এক্তি মেয়ের নাম দেখে গৃহীত হল এবং ছাপাও হল। তখনকার সেই 'নীহারিকা দেবী' হলেন কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত।
মেয়েরা বোধহয় আজও একইরকম গুরুত্ব পায়। সে শুধু সম্পাদকের কবিতার ঝুলিতে নয়, বাসে, ট্রেনে, মেট্রো তে, পরীক্ষার ফলাফলে, চাকরির পরীক্ষায় আরও কত নানান জায়গায়।

Landing Page: https://track.fiverr.com/visit/?bta=78364&nci=6915
বাঙ্গালী কবি ও লেখকদের ছদ্মনামের তালিকা 

যাই হোক, এবার চলুন আসল কথায়। অর্থাৎ আমি আপনাদের কথা ভেবে, আপনাদের জানার সুবিধার্থে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি ও লেখকদের এক্তি তালিকা প্রস্তুত করেছি। এই তালিকা আমি এমনভাবে বানিয়েছি যে, তা শিক্ষার্থীদের জন্য ও খুব উপকারে লাগবে।
আপনাদের সবার কিছুটা উপকারে লাগলে আমার এই ছোট্ট প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
নিম্নে তালিকাটি দেওয়া হল।




প্রকৃত নাম
ছদ্ম নাম



রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভানুসিংহ
বঙ্কিমচন্দ্র চটোপাধ্যায়
কমলাকান্ত
শরৎচন্দ্র চটোপাধ্যায়
অনিলাদেবি
রাজশেখর বসু
পরশুরাম
কালিপ্রসন্ন সিংহ
হুতোম প্যাঁচা
প্যারিচান্দ মিত্র
টেকচাঁদ ঠাকুর
সৈয়দ মুজতবা আলি
সত্যপীর
রাধারানী দেবী
অপরাজিতা দেবী
প্রাণতোষ ঘটক
উদয়ভানু
১০
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
নীহারিকা দেবী
১১
মোহিতলাল মজুমদার
সত্যসুন্দর
১২
প্রমথনাথ বিশী
প্র না বি
১৩
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
বনফুল
১৪
মধুসুদন মজুমদার
দৃষ্টিহীন
১৫
মুকুন্দ দাস
যগ্মেশ্বর দাস
১৬
বিরেন্দ্র কৃষ্ণ দাস
বিরূপাক্ষ
১৭
দেবেশ রায়
বেদুইন
১৮
অন্নদাশঙ্কর রায়
লীলাময় রায়
১৯
ভৃগুরাম দাস
শুভঙ্কর
২০
বিনয় ঘোষ
কালপেঁচা
২১
কালিকানন্দ মুখোপাধ্যায়
অবধুত
২২
দিপেন্দ্র সান্যাল
নীলকণ্ঠ
২৩
সুবোধ ঘোষ
কালপুরুষ
২৪
ললিত মুখোপাধ্যায়
বিজ্ঞানভিক্ষু
২৫
অশোক গুপ্ত
বিক্রমাদিত্য
২৬
ডঃ অরবিন্দ গুহ
ইন্দ্রমিত্র
২৭
প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়
মানিক বন্দোপাধ্যায়
২৮
নারায়ন সান্যাল
বিকর্ণ
২৯
প্রেমাঙ্কুর আতীর্থ
মহাস্থবির
৩০
শেইলেশ দে
বহুরূপী
৩১
ভবানী সেনগুপ্ত
চানক্য সেন
৩২
মানবেন্দ্র রায়
নীরেন্দ্রনাথ ভট্যাচার্য
৩৩
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
নবকুমার কবিরত্ন
৩৪
প্রফুল্ল লাহিড়ী
কাফি খাঁ
৩৫
প্রমথ চৌধুরী
বীরবল
৩৬
বিনয় মুখোপাধ্যায়
যাযাবর
৩৭
চারুচন্দ্র চক্রবর্তী
জরাসন্ধ
৩৮
সঞ্জীব চটোপাধ্যায়
প্রমথনাথ বসু
৩৯
নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়
সুন্দন্দ
৪০
কালাচাঁদ ভাদুরি
কালাপাহাড়
৪১
তরুণ রায়
ধনঞ্জয় বৈরাগী
৪২
বিমল ঘোষ
মৌমাছি
৪৩
নিখিল সরকার
শ্রীকান্ত
৪৪
পূর্ণচন্দ্র গুই
বাজীরাও সেন
৪৫
নীহাররঞ্জন গুপ্ত
বানভট
৪৬
সমরেশ বসু
কালকূট
৪৭
অখিল নিয়োগী
স্বপন বুড়ো
৪৮
গৌরকিশোর ঘোষ
রুপদরশি
৪৯
নিরঞ্জন মজুমদার
রঞ্জন
৫০
ভবানীচরন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রমথনাথ বর্মা
৫১
ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
পঞ্চানন্দ
৫২
সাবিত্রিপ্রসন্ন চটোপাধ্যায়
অমিতাভ
৫৩
বিমল কর
সনাতন পাঠক
৫৪
মনিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়
শঙ্কর
৫৫
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
নীললোহিত
৫৬
নীহার ঘোষাল
দীপক চৌধুরি
৫৭
অমিতাভ চৌধুরি
নিরপেক্ষ
৫৮
অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অমিয়া দেবী
৫৯
আনন্দ বাগচি
ত্রিলোচন কলমচি
৬০
আব্দুল করিম
সাহিত্য বিশারদ
৬১
আব্দুল কাদির
ছান্দসিক কবি
৬২
আলাওল
মহাকবি
৬৩
ইশ্বর গুপ্ত
যুগসন্ধিক্ষণের কবি
৬৪
কাজেম আল কোরায়েশি
কায়কোবাদ
৬৫
গোবিন্দ্র দাস
স্বভাব কবি
৬৬
গোলাম মোস্তফা
কাব্য সুধাকর
৬৭
জীবনান্দ দাশ
রূপসী বাংলার কবি, তিমির হননের কবি, ধুসর পাণ্ডুলিপির কবি


মন্তব্য

অনেকে মনে করেন বিখ্যাত হবার শর্টকাট  রাস্তা হল 'ছদ্মনাম নেওয়া'। এতে অনেকের উতসুক্য অর্জন করা যায়। তবে শ্রুতিমধুর ও তাৎপর্যপূর্ণ নামকরণ যেমন একটা কঠিন কাজ, তেমনি একটি যুতসই ছদ্মনাম গ্রহন খুব কঠিন। 
তবে একাজে যে অনেকের মুন্সিয়ানা আছে তা আজকাল ফেসবুকে চোখ রাখলেই দেখা যায়। আহা! কি নাম! শুনলেই মনে কত রকমের ভাব আসে। মনে হয় ছদ্মনামের ট্র্যাডিশন আজ সমানে চলছে। সে সাহিত্য জগতেই হোক আর ফেসবুক কিংবা ব্লগেই হোক।
ছদ্ম নামে পরিচিত বাঙ্গালী

Tag: Pen name, Pen name of indian writer, indian writer pen name, pen name of bengali writer, bengali writer pen name, pen name history, bangla sahityo, bengali literature, chodmo nam, chodmo name bengali, bangla literature, bengali article, bengali, bengali bangladeshi, bengali indian, ছদ্ম নাম, বাঙ্গালী, বাংলা সাহিত্য, বাঙ্গালী সাহিত্যিক দের ছদ্ম নাম, ছদ্ম নামের ইতিহাস, বাঙ্গালী কবিদের ছদ্মনাম, কবি ও লেখক, সাহিত্যিক, প্রবন্ধ

No comments