কবিতা - বিদ্রোহ ।। Kobita - Bidroho
ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। বই বলতে কিন্তু পড়ার বই নয় ; গল্প, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ প্রভৃতি। এ বইগুলো পড়তে পড়তে যে লাইন টা ভালো লাগত, মনে দাগ কেটে যেতো ঐ লাইন গুলো টুক করে তুলে রাখতাম আমার ডায়েরির পাতায়। তেমনই একটা লাইন ছিল আমার প্রিয় সাহিত্যিক কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উপন্যাস টার নাম টা ঠিক এই মুহূর্তে মনে পরছে না। তবে লাইন টা ছিল ঠিক এরকম ---
সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছুই, যারা বঞ্ছিত, যারা দুর্বল , উৎপীড়িত, মানুষ যাদের চোখের জলের কখনও হিসাব নিলে না, নিরুপায়, দুঃখময় জীবনে যারা ভেবেই পেলে না সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই ------- এদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে। তাই আমার কারবার শুধু এদের নিয়ে। -------- ...... সংসারে সৌন্দর্য সম্পদে ভরা বসন্ত জানি আনে সঙ্গে তার কোকিলের গান, আনে প্রস্ফুটিত মালিকা-মালতি জাতি-যূথী , আনে গন্ধ ব্যাকুল দক্ষিনা পবন। কিন্তু যে আবেষ্টনের মধ্যে আমার দৃষ্টি আবদ্ধ হয়ে গেল তার ভেতর এরা দেখা দিলে না। এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুযোগ আমার ঘটলো না। সে দারিদ্র্য আমার লেখার মধ্যে চাইলেই চোখে পড়ে । কিন্তু অন্তরে যাকে পাইনি শ্রূতিমধুর শব্দরাশির অর্থহীন মালা গেঁথে তাকে পেয়েছি বলে প্রকাশ করার ধৃষ্টতাও আমি করিনি ।এতো গেল উপন্যাসে কথাশিল্পীর মনের ভাবনা। আর একজন বাংলার এক তরুন কবি ছিল, তরুন বলছি এই কারনে, তাঁর সাহিত্য জীবন শুরু ছোট থেকে হলেও শেষ হয়ে যায় খুবই তরুন বয়সে। মাত্র ২৩ বছর। তাঁর জীবনের ২৩ টা বসন্ত পেরোতে না পেরোতেই নিষ্ঠুর বিধি তাঁকে ডেকে নেন নিজের কাছে যক্ষ্মা রুপী এক ভয়ঙ্কর দুতের মাধ্যমে।
নিশ্চয় সবাই বুঝতে পারছেন যে কার কথা বলছি।
ঠিক ধরেছেন। কবি সুকান্ত, আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম।
একবার স্কুলে ইনার রচিত কবিতা 'অনুভব' আবৃত্তি করেছিলাম। এই কবিতার লাস্টের কয়েকটি পঙ্কতি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছিল। পঙক্তিটা ছিল ---
এই দুই লেখকের দুই বলিষ্ঠ রচনা আমার লেখনী মনকে উন্মাদ করে তুলেছিল। তাইতো মন হতে ডায়েরির পাতায় নেমে এসেছিল এই বিদ্রোহের কবিতা আমার প্রিয় ঝর্না কলমের কালো কালির মধ্য দিয়ে।
বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে আমি যাই তারি দিন পঞ্জিকা লিখে। এত বিদ্রোহ কখনো দ্যাখেনি কেউ দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ স্বপ্ন চূড়ার থেকে নেমে এসো সব শুনেছ ? শুনেছ ? উদ্যাম কলরব । নয়া ইতিহাস লিখছে ধর্মঘট রক্তে রক্তে আঁকা প্রচ্ছদপট । প্রত্যহ যারা ঘৃণিত ও পদানত দেখ আজ তারা সবেগে সমুদ্যত তাদেরই দলের পেছনে আমিও রয়েছি তাদেরই মধ্যে আমিও যে মরি বাঁচি । তাইতো চলেছি দিন পঞ্জিকা লিখে, বিদ্রোহ আজ বিপ্লব চারিদিকে।
বিদ্রোহ
--------- সৌরভ
আমি কবি,
আমি কবি এ পৃথিবীর,
আমি কবি মানুষের,
আমি কবি মুটে-মজুরের,
আমি কবি কুলিদের,
কবি আমি ইতরের।
আমি লিখি কবিতা
তাদের জন্যে তা,
যাদের মুখে ফোটেনি এখনও কথা।
যারা এখনও রয়েছে অবলা,
যারা এখনও সহ্য করে মুখ বুজে
সমস্ত অত্যাচারের পালা।
আমি তাদেরই জন্য লিখি কবিতা,
যারা হয়েছে আজ বেশ্যা।
যারা আজও ভিক্ষা করে
দ্বারে-দ্বারে –
দু'মুঠো চালের তরে।
আমি তাদেরই জন্য লিখি কবিতা,
যাদের ভদ্র সমাজ দেয়নি বাঁচার অধিকার;
'যারা দিয়ে গেল সবই
পেল না কিছুই আজ'।
সমাজ যাদের তরে ভাবেনি কখনও আর,
আজ তারা হয়েছে সন্ত্রাস।
মাওবাদী তারা, নকশাল তারা
নয়তো সভ্য মানুষ আজ;
বিদ্রোহ করে তারা
পৃথিবীটা সারা
ন্যায্য অধিকার নেবে বলে।
সমাজ কী বসে রবে
দেবে না অধিকার,
ডাকবেনা তাদের কাছে ?
সমাজ কী মেনে নেবে
এ অত্যাচার,
এ বৈষম্যতার জগৎটাকে ?
থেকোনা বসে সমাজ তুমি,
উঠব জেগে আমরা
ভাঙব তোমার মাথাটাকে
করব বুক ঝাঁঝরা।
এসো সন্ত্রাস, এসো বিপ্লবী
চলো এগিয়ে চলি,
যতদিন আছে বুকে প্রিয় প্রাণ
চলো যুদ্ধ করি।
বিদ্রোহী মোরা,
বিদ্রোহ করি
নয়তো সময় আজ
চাঁদ দেখবার
চাঁদ যেন আজ
পোড়া এক রুটি।
চলো এসো যাও এগিয়ে তোমরা,
বসে থেকোনা আর মিছে-মিছে
আমি রব তোমাদেরই পিছে।
'বিদ্রোহ আজ
বিদ্রোহ চারিদিকে',
বিদ্রোহ আজ
হিমালয় থেকে
ভারত মহাসাগরের –
প্রতিটি দ্বীপে।
'এত বিদ্রোহ কখনও দ্যাখেনি কেউ
দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ',
চারিদিকে ওঠে বিপ্লবীর ঢেউ।
সমাজ তুমি আর বসে থেকোনা মিছে,
Post a Comment