আগে নিজেকে চেনো, নিজেকে জানো ; তারপর দেখবে গোটা দুনিয়া তোমাকে চিনছে। সৌরভের দর্শন। সৌরভের ডায়েরির পাতা থেকে । Know yourself first, Then you will see that the whole world knows you. Souravs philosophy. From the pages of Sourav’s diary.
কতদিন ডায়েরী লেখা হয়নি। কতদিন মনের কত কথা কারোর সাথে শেয়ার করা হয়নি। কথা গুলো শুধু মনের মধ্যে চাপা পড়ে থাকত আর গুমরে গুমরে কাঁদত। আর যদি কাউকে কোনো ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করি, তবে সে হয়ত মজা করবে, নয়ত আনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে।
তাই মনের কথা মনেই জমে থাকত, আর তার ফলস্বরুপ নিরাশা, দুশ্চিন্তা প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব।
তাই আবার নতুন করে ডায়রি লিখব বলে ঠিক করলাম। ডায়েরী লিখলে এসবের কোনো ভয় নেই। না কেউ মজা উড়ানোর আছে, না আছে দুর্বলতার সুযোগ নেবার।
আসলে ডায়েরীর মত প্রকৃত শ্রোতা আর এ দুনিয়ায় কেউ নেই। সে মন দিয়ে সমস্ত কথা শোনে যায় আর তার স্মৃতিতে রেখে দেয়। আর দরকার পড়লে সেই স্মৃতি সুদ সমেত আমাকে ফেরত দিয়ে দেয়। না কোনো বাধা, না কোনো অজুহাত, কিছুই নেই।
তাই তো আমি মানুষের সাথে কথা বলে মন হালকা করার চাইতে লেখা লেখি করতে ভালোবাসি। ভালোবাসি কবিতা লিখে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে। এতে হয়ত লোকে আমায়্ বদ, অহংকারী ইত্যাদি ভাবতে পারে। তা ভাবুক না। যে যা ভাবতে চায়, তাকে তাই ভাবতে দাও। তুমি তোমার নিজের মতই থাক।
লোকের প্রত্যেকটি ভাবনার কথা চিন্তা করতে গেলে, প্রত্যেককে খুশি করতে গেলে, আমি নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলব। আমি হারিয় ফেলব আমার নিজস্ব স্বত্তাকে।
আসলে যে মানুষ নিজেই নিজেকে চিনতে পারেনি, সে অপরকে চিনবে কি করে? যে নিজেই নিজেকে খুশি রাখতে পারেনি, সে অপরকে খুশি রাখবে কি করে?
আমার মতে, আগে নিজেকে চেনো, নিজ্রের অন্তরাত্মাকে জানো; তারপর দেখবে গোটা দুনিয়া তোমাকে চিনছে, তোমাকে জানছে।
তাই প্রত্যেকটা মানুষের উচিত নিজেকে আত্ম বিশ্লেষণ করার। আত্ম বিশ্লেষণ না করলে কেউ কখনই তার চরম পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে না।
যেমন - একজন ব্যবসায়ী , সে যদি নিয়মিত ভাবে নিজের ব্যবসা, আয়, ব্যয় প্রভৃতি বিশ্লেষণ না করে, তবে সে টানা বেশীদিন ব্যবসা চালাতে পারবে না। এটা সব ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
শুধু ক্যারিয়ার কেন, কোনো মানুষ যদি তার নিজের চরিত্র, তার কার্যকলাপ, সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ে বিশ্লেষণ না করে, তবে সে বুঝবে কি করে সে সঠিক নাকি বেঠিক ট্র্যাকে আছে। তাই প্রত্যেকেরই প্রয়োজন আত্ম বিশ্লেষণ করবার।
আর তাছাড়া আত্ম বিশ্লেষণ করার পরে, মনের মধ্যে আর কোনো দুশ্চিন্তা, নিরাশা কিংবা আত্মগ্লানি থাকে না। মনটা যেন পুরো পুরি ফাঁকা হয়ে যায়। মনে হয় যেন, বিশাল বড় একটা পাথর যেটা অনেকদিন চাপা পড়ে ছিল, সেটা সরে গেল।
তখন নতুন নতুন ক্রিয়েটিভিটি আইডিয়া আসে। তাই তো প্রত্যেক মহান পুরুষ, প্রত্যেক সফল ব্যক্তি আত্ম বিশ্লেষণ করে থাকেন। তারা নিজেদের দোষ, গুণ, সফলতা, অসফলতা সব কিছু এইভাবে খুঁজে বের করেন।
তাই তো প্রত্যেকের উচিৎ নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করানোর।
জানি এই ব্যস্ত জীবনে, কিছুটা সময় নিজের জন্য বের করানো এককথায় অসম্ভব। কিন্তু এই পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কোনো কিছুই হয়্ না। সব কিছুই সম্ভব। কারন এ পৃথিবীতে সব কিছুই আপেক্ষিক।
তাই প্রতিদিন সামান্য কিছুটা সময় নিজের জন্য বের করে নিজের মনের মন্থন করে মনের গভীরে থাকা বিষ বাইরে বের না করলে, অমৃত কি করে উৎপন্ন হবে?
প্রতিটি মানুষের মন ই এক অসীম সমুদ্র।
এইভাবে সবাই যদি মনের মন্থন করে অমৃত উৎপন্ন করতে থাকে, নিজের চেতনা কে জাগ্রত করে, তবেই এই পৃথিবীতে কোনোদিন যুদ্ধ, হাহাকার, অশান্তি আর কখনো বিরাজ করবে না। চারিদিকে শুধু শান্তি আর ভালোবাসা।
এবার প্রত্যেকের মনের মন্থনের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি আছে, যেমন আমার পদ্ধতি লেখা লেখি করা। একবার লেখা লেখি করলে আমার মন পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়। সমস্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হই আমি, একেবারে যেন আকাশে ওড়া মুক্ত পাখি।
Post a Comment