Header Ads

When first time poetry in bengali? বাংলা কবিতার উৎপত্তি ও ইতিহাস

 


কবিতা, মানুষের মনের ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ। 

কবিতাই পারে আমাদের জীবনে নানান রঙ এ ভরিয়ে দিতে। আমাদের গোপন ভাবনা গুলোকে সুন্দর করে প্রকাশ করতে। 

আমরা সবাই কবিতা লিখতে পারি না, ঠিক করে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না। তাই তো কবিরা আমাদের হয়ে সেই কাজ করে দেন। 

তাঁরা তাঁদের মননের গহীনে গিয়ে আমাদের লুকানো ভাবনা গুলোকে রত্নের মত সমুদ্র মন্থন করে বের করে আনেন। 

অনেক গৌরচন্দ্রিকা হল। এবার চলুন, এই বাঙলা কবিতার উৎপত্তি ও ইতিহাস নিয়ে এক্টূ আলোচণা করা যাক। 

উৎপত্তি 

 বাঙলা কবিতার উৎপত্তি হয়েছিল মূলত পালি এবং প্রাকৃত সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি থেকে। সাধারণত বাঙলা কবিতার প্রথম সাহিত্য কর্ম হিসাবে চর্যাপদ কে বিবেচনা করা হয়। এই চর্যাপদ ই ছিল বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। এই চর্যাপদের প্রাচীন পদ গুলি মূলত বৌদ্ধ মরমী গান ছিল। 

ইতিহাস

এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, বাঙলা কবিতার ক্রমবিকাশ। 

বাঙলা কবিতার ক্রমবিকাশ কে ঠিক করে পর্যবেক্ষণ করলে, সাধারণত একে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। 

১। প্রাথমিক যুগ, 

২। মধ্য যুগ ও 

৩। আধুনিক যুগ। 

চলুন, এবার এই তিন যুগের বাঙলা কবিতা নিয়ে এক্টূ বিস্তৃত ভাবে কথা বলা যাক। 

১) প্রাথমিক যুগ ঃ 

চর্যাপদ বাঙলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতি পদাবলি গুলির রচয়িতা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্জ গন। 

চর্যাপদের ২৪ জন পদকর্তা হচ্ছেন লুই পা, কুক্কুরীপা, বিরুআপা, গুণ্ডরীপা, চাটিলপা, ভুসুক পাকাহ্নপাদ, কাম্বলাম্বরপা, ডোম্বীপা, শান্তিপা ,মহিত্তাপা, বীণাপা, সরহপা, শবর পা, আজদেবপা, ঢেণ্ঢণপা, দারিকপা, ভাদেপা, তাড়কপা, কঙ্কণপা , জঅনন্দিপা, ধামপা, তান্তীপা, লাড়ীডোম্বীপা।

২) মধ্য যুগ ঃ 

মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। আনুমানিক চৌদ্দ শতকের শেষার্ধে বা পনেরো শতকের প্রথমার্ধে বড়ু চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি অবলম্বনে এ কাব্য রচনা করেন। 

এ সময় মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন। মধ্যযুগের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর পঞ্চদশ শতকে প্রণয়োপখ্যান জাতীয় কাব্য “ইউসুফ-জোলেখা” রচনা করেন। 

এর বাইরে অনুবাদসাহিত্য মধ্যযুগের অনেকখানি অংশজুড়ে আছে। এ ধারার সূত্রপাত হয় কবি কৃত্তিবাস কর্তৃক রামায়ণের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বাংলায় আরও অনূদিত হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ। মধ্যযুগের বিশাল পরিসর জুড়ে ছিলো মঙ্গলকাব্য। দেবদেবীর মাহাত্ম্যসূচক এই কাব্যধারার সূত্রপাত হয় পনের শতকে। তবে ষোল শতকে এর সর্বাধিক প্রসার ঘটে।

 ধর্মমঙ্গলমনসামঙ্গল, শিবমঙ্গল বা শিবায়নচণ্ডীমঙ্গল ইত্যাদি এ পর্যায়েরই নানা শাখা। এই ধারার অন্যতম কবি মাণিক দত্ত, কানাহরি দত্তবিজয়গুপ্তবিপ্রদাস পিপিলাইকবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীভারতচন্দ্র রায়গুণাকর প্রমুখ। 

শ্রীচৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) আবির্ভাবের ফলে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ সমৃদ্ধির পথে অনেকখানি এগিয়ে যায়। মধ্যযুগেই আরাকানের রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা আরম্ভ হয়। এছাড়া শাক্ত পদাবলী, নাথসাহিত্যবাউল ও অপরাপর লোকসঙ্গীতময়মনসিংহ গীতিকাপূর্ববঙ্গ-গীতিকা ইত্যাদি অমূল্য সাহিত্য মধ্যযুগেরই সৃষ্টি।

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ 

বাংলা সাহিত্যের ১২০০-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” হিসেবে চিহ্নিত।

হুমায়ুন আজাদ তার “লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০১ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। 

পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।” কিন্তু, ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত’ (পৃ. ১০৫)-এ লিখেছেন- “বাংলা সাতিহ্যের কথিত ‘অন্ধকার যুগ’ মোটেই সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম -শিক্ষা শিল্প চর্চার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তারা সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে, কি হিন্দু কি মুসলমান কেউ লোকভাষা বাংলাকে গ্রহণ করেননি। বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন না থাকার এটাই মুখ্য কারণ।

৩) আধুনিক যুগ ঃ 

১৮০০- বর্তমান, চলমান। মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যে যিনি সেতুবন্ধন তৈরি করেন তিনি হলেন যুগ সন্ধি ক্ষণের কবি: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯)। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) মধ্যযুগীয় পয়ারমাত্রা ভেঙে প্রবেশ করেন মুক্ত ছন্দে। রচনা করেন সনেট। লাভ করেন, আধুনিক কবিতার জনকের খ্যাতি। 

ভোরের পাখি : ইউরোপীয় ভাবধারার রোমান্টিক ও গীতি কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪)।

 মহিরুহ বৃক্ষের ন্যায় বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। মহাকাব্য ব্যতীত সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি খ্যাতির স্তম্ভটি প্রতিষ্ঠা করেননি। 

রবীন্দ্রানুসারী ভাবধারার অন্যান্য কবিরা হলো: সত্যেন্দ্রনাথ দত্তযতীন্দ্রমোহন বাগচী। বিশ শতকের শুরুতে কবিতায় পঞ্চপুরুষ রবীন্দ্রবিরোধিতা করেন, তারা হলো : মোহিতলাল মজুমদারকাজী নজরুল ইসলাম ও যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । 

আধুনিক কবিতার স্বর্ণযুগ: রবীন্দ্র ভাবধারার বাইরে এসে দশক প্রথার চালু করেন তিরিশের পঞ্চপান্ডব কবি: অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭), জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪), বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)।

তথ্যসুত্রঃ

১) Bengali Poetry - Wikipedia 

২) Bengali literature - Wikipedia 

৩) The History of Poetry - Oobsidian 

৪) Bengali literature - Britannica

৫) Michael Madhusudan Dutt - Britannica 

৬) বাংলা সাহিত্য - উইকিপিডিয়া 

৭) বাংলা কবিতা - উইকিপিডিয়া 




No comments