Header Ads

ছোট গল্প - ট্রেন দুর্ঘটনা । Bengali short story of Train accident | Train Durghotona

Bengali short story of Train accident | Train Durghotona

ট্রেন দুর্ঘটনা 

আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগেকার কথা। তখন রায় বাবুর বাড়িতে একজন চাকর ছিল। চাকরটির বয়স হবে পঁচিশ কি ছাব্বিশ। সে পড়াশুনা বেশি জানত না, কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধিতে পাকা এবং খুব পরোপকারী ছিল। তার সম্বন্ধে কথা বলা শুরু করলে পুরো মহাভারত লেখা হয়ে যাবে। ওসব এখন থাক না হয়, পরে একদিন ওর ব্যাপারে বিস্তৃত ভাবে কথা বলা যাবে। 

এখন বরঞ্চ তার একটা পরোপকারী ঘটনার কথা বলি। 

ঘটনাটির শুরু এভাবে; তখন আমাদের গ্রামে নতুন রেললাইন তৈরি হয়েছে, কয়েকটা রেল ও চলাচল শুরু করেছে। রায় বাবুর চাকর, ও !!! তার নাম টা তো বলা হয়নি। ওর নাম মানিক। তাহলে এখন থেকেই  আর রায় বাবুর চাকর না বলে মানিক বলেই কথা বলব। 


তো, মানিক প্রতিদিন রেল লাইনের পাশের মাঠে গরু চরাতে নিয়ে যেত আর বসে বসে রেলের যাওয়া - আসা দেখত। সেরকম একদিন, ও মাঠে গরুকে ঘাস খাবার জন্য ছেড়ে দিয়ে বসে অপেক্ষা করছিল কখন রেল আসবে। 

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে সে রেলের আসার আওয়াজ শুনতে পারল, বুঝতে পারল যে রেল আসছে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল রেলের যাবা দেখার জন্য। হঠাৎ তার কি মনে হল, একটু কাছ থেকে দেখবে বলে সে রেল লাইনের কাছাকাছি যেতে লাগ্ল। 

রেলের লাইনের কাছাকাছি যেতেই, হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ল, রেলের লাইন তো কাটা। তখন তার মনে হল যে এই রেলের ভিতর কত হাজার - হাজার মানুষ আছে, সে যদি এখন কিছু না করে, তাহলে কত মানুষের জীবন চলে যাবে। সে এটা ভেবেই খুব চিন্তায় পড়ে গেল, যে কি করা যায়? 

হঠাৎ তার মনে পড়ল যে, সে টিভি তে একবার দেখেছিল যে লাল কাপড় দেখিয়ে রেল কে দাঁড় করানো যায়। কিন্তু তার কাছে তো কোনো লাল কাপড় নেই। সে ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে!!! 

এদিকে ট্রেন ও খুব কাছাকাছি চলে এসছে। এখন কিছু করতে না পারলে, কত গুলো মানুষের জীবন চলে যাবে। 


হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে তার ডান হাত টা দিয়ে খুব জোরে পাশে পড়ে থাকা পাথরে ঘুশি পড়ল। ফল স্বরুপ তার হাত থেকে গল গল করে গাঢ় লাল রঙের রক্ত বেরোতে থাকল। সে সেই মুহূর্তে কোন কিছু ভ্রুখেপ না করেই তার সাদা গেঞ্জি টা এক টানে ছিঁড়ে ফেলল আর জড়িয়ে নিল ডান হাতে। সাদা রঙের গেঞ্জিটা লাল রক্তে মিশে পুরো লাল রঙের গেঞ্জি হয়ে গেল। 

তারপর সে সেই লাল রক্তে মাখা গেঞ্জি জড়ানো হাত নাড়াতে লাগল ট্রেন থামানোর জন্য। ট্রেনের চালক দূর থেকে দেখলেন কেউ একজন লাল কাপড় দিয়ে কোনো দুর্ঘটনার সংকেত দিচ্ছেন। তিনি ট্রেন থামালেন এবং কিছু লোক জন নিয়ে মানিকের কাছে এলেন ব্যাপার খানা দেখতে। 

তিনি এসে বুঝতে পারলেন যে তিনি কত বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন। তিনি সাথে সাথে উপর মহলে খবর পাঠালেন এবং ধন্যবাদ জানালেন মানিক কে। রেলের পুলিশ বাহিনী এসে মানিক কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এবং ওর ঠিকানা অর্থাৎ রায় বাবুর বাড়ির ঠিকানা টা নিয়ে নিলেন। 

এদিকে এত বড় খবর গ্রামে চারদিকে ছড়িয়ে যেতেই সবাই এসে জরো বাঁধল রেল লাইনের কাছে এবং বাহবা দিতে লাগল মানিক কে। কিন্তু মানিকের কোনো অহংকার নেই। 

এক সপ্তাহ পরে রেলের কিছু অফিসার এলেন রায় বাবুর বাড়িতে, তারা বললেন যে সরকার বাহাদুর মানিক কে তার সাহসী কাজের জন্য পুরস্কার দিতে চায়। এ কথা শুনে মানিকের যত না খুশি, তার চেয়ে বেশি খুশি রায় বাবু এবং গ্রামের লোকে হয়েছিল।   


তারপর সঠিক দিনে মানিক একটা অনুষ্ঠানে রেলের কর্তাদের কাছ থেকে পুরস্কার নিল এবং সরাসরি তুলে দিল রায় বাবুর হাতে। তার কথা ছিল, সে ছোট বেলা থেকেই রায় বাবুর কাছে ছিল, আজ সে যা কিছু শিখেছে - জেনেছে সব কিছু রায় বাবুর কাছ থেকে, তাই এ পুরস্কার পাবার আসল হকদার হল রায় বাবু। 

এসব শুনে রায় বাবুর চোখে জল চলে এল, উনি আজ নিজেকে সার্থক মনে করলেন। 


আজকের বাস্তবের এক মধ্যবিত্ত বেকার যুবকের আত্মকথা। একটি বেকার যুবক যে মাথার ওপর গুরু দায়িত্ব নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে, খালি পেটে দিনের পর দিন গায়ের গতর খাটিয়ে, টিউশন পরিয়ে অন্য তুলে দেয় বুড়ো বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনের মুখে। এত বড় বলিদানের পরেও সমাজে তার কোনো দাম নেই, কারণ সে বেকার। এই মধ্যবিত্ত বেকারদের জীবন খুব সুন্দর করে তুলে ধরার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র এই কবিতায়, যার নাম – "আমি সেই ছেলে"।


Tag: bangla choto golpo, choto golpo, bangla choto golpo protilipi, train, train accident, train durghotona, barir chakor, manik, gram, ছোট গল্প, ট্রেন দুর্ঘটনা, ট্রেনের গল্প, বাড়ির চাকর, গ্রামের কথা, পরোপকার, জীবন 


No comments